ঢাকাবুধবার , ৮ অক্টোবর ২০২৫
  1. ইতিহাস
  2. উলিপুর উপজেলা
  3. এসবি পডকাস্ট (বিভাগ ভিত্তিক)
  4. কুড়িগ্রাম
  5. কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা
  6. খুলনা বিভাগ
  7. চট্টগ্রাম বিভাগ
  8. চাকরি
  9. চিলমারী উপজেলা
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. নাগেশ্বরী উপজেলা
  13. নারী
  14. প্রযুক্তি
  15. ফুলবাড়ী উপজেলা
আজকের সর্বশেষ খবর

চন্দন কাঠ’ভেবে উৎসুক জনতার ভীড় না বুঝেই চলছে কেনা-বেচা !

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
অক্টোবর ৮, ২০২৫ ৯:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্তের কালজানী নদী হয়ে নাগেশ্বরীর দুধকুমার নদে গত ২ দিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভেসে এসেছে কয়েক হাজার গাছের গুড়ি। এসব গাছের গুড়ি বাকল ও শিকড় বিহীন হওয়ায় এবং দেখতে লাল বর্ণের হওয়াতে উৎসুক জনতা ‘রক্ত চন্দন ভেবে ভীড় করছেন। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর স্রোতকে উপেক্ষা করে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এসব গাছের গুড়ি নিয়ে এসে তীড়ে জমিয়ে সেগুলো ‘চন্দন কাঠ’ হিসেবে বিক্রি করছেন। অনেকেই আবার না বুঝেই সেগুলো কিনছেন। উৎসুক জনতার এমন কান্ড দেখে স্থানীয়রা এসব কাঠের গুড়ি একেকটি ২০ থেকে ৩৫ হাজার দাম হাঁকাচ্ছেন,কেউ কেউ ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত দাম চাচ্ছেন।
তবে জেলা বন বিভাগ বলছে মানুষজন না বুঝেই এসব কাঠের গুড়ি শ্বেত বা রক্ত চন্দন ভেবে বেচা-কেনা করছেন ।
ইতোমধ্যে এসব গাছের গুড়ি উঠাতে গিয়ে রোববার(৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলার বের“বাড়ীর খেলারভিটায় খামার নকুলা গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে মনছুর আলী (৪০) পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন ।
মঙ্গলবার(৭ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ভুটান হয়ে ভারত থেকে ভেসে আসা এসব গাছের গুড়ি মঙ্গলবার ভোর বাংলাদেশ সীমান্তে আর ভেসে আসতে দেখা যায় নি। আগের ২ দিন ভেসে আসা কাঠের গুড়ি গুলো মূল্যবান ভেবে কালজানী ও দুধকুমার নদের পাড়ে স্তুপ করে রেখেছেন স্থানীয় উৎসুক জনতা। এসব কাঠের গুড়ি একেকটির আকার ও পরিমাপ ভেদে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বেচা-কেনা হচ্ছে। আর যেসব কাঠের গুড়ি নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো জ্বালানী হিসেবে কেউ কেউ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন আবার অনেকেই সেগুলো মণ হিসেবে বিক্রি করছেন।
এর আগে গত ২দিন দেখা যায়,উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের নুনখাওয়া, বেরুবাড়ি ইউনিয়নের খেলারভিটা, রায়গঞ্জের বড়বাড়ী, বামনডাঙ্গার আয়নালের ঘাট, আদর্শ বাজার, মুড়িয়া, পাচমাতা, তেলিয়ানী, বের“বাড়ী ইউনিয়নের ইসলামপুর থেকে খেলারভিটা হয়ে কালীগঞ্জ ইউনিয়নের সিএন্ডবি ঘাট পর্যন্ত দুধকুমারের দুই তীরে অসংখ্য মানুষ কেউ নৌকা নিয়ে, কেউ সাতরিয়ে সে গাছগুলো ধরে স্তুপ করে রাখছেন নদের কিনারে।
বামনডাঙ্গা তেলিয়ানীর স্কুল শিক্ষক ওছমান গণি জানান, শনিবার গভীর রাতে হঠাৎ মানুষের শোরগোল ও চিৎকার চেচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গে তার। ভেবেছেন চোর পড়েছে গ্রামে। দ্রত বিছানা ত্যাগ করে শব্দের উৎস খুঁজতে দুধকুমারের কিনারে গিয়ে দেখেন দুইদিকে চোখ যত দুরে যায় ততদুরে শুধু মানুষ আর মানুষ। আলোয় আলোকিত নদের তীর। এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান লোকজন যেমনভাবে পারছে তেমনভাবেই লাফিয়ে পড়ছে নদীতে। সাতড়িয়ে ধরে আনছে আস্ত এক একটি গাছ। যে গাছগুলো আমরা চিনি না। এ এলাকায় দেখিনি কখনো। সকাল হতে হতেই নদের দুইপাশে গাছের স্তুপ জমে যায় ।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক হাজার ভেসে আসা এসব গাছের গুড়ি জ্বালানী হিসেবে এর বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ছিটমাইলানী গ্রামের বাসিন্দা মো. সিরাজ বলেন, ‘আমি গত কাল রাইত থেকে পরিবার নিয়ে কাঠের গুড়ি গুল্যা জমাইছি। প্রায় ৫০০ মণ হবে আমার কাঠ। পরিবারের জন্য কিছু রেখে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার বিক্রি করবো।’
পাশের রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামাল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন,’ চারজন মিলে ৫০ ফিটের এই লাল গাছ টা উঠাইছি। আরো ৬ জন সাহায্য করছে। এটা রক্ত চন্দনের গাছ ১ লাখ ২০ হাজার হলে বিক্রি করবো।’
কালজানি নদীর পাড়ের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন,’আমার খড়ি গোলা রয়েছে। একেকটা গাছের গুড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনলাম। এগুলো কেটে জ্বালানী হিসেবে বিক্রি করবো।’
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মীর্জা নাসির উদ্দিন বলেন,’সার কাঠে প্রচুর ট্যানিন  এবং ফেনলিক যৌগ থাকে।যখন কাঠ পানিতে ভিজে, তখন এই যৌগগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বের হয়। ট্যানিন অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে অক্সিডেশন ঘটায় এবং লালচে-বাদামি রঙ তৈরি করে। প্রকৃত পক্ষে এগুলো চন্দন কাঠ নয়।
জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা রোববার সরেজমিনে এসব গাছের গুড়ি দেখেছি। দীর্ঘ দিন এসব পানিতে থাকায় লাল বর্ণ ধারণ করেছে। প্রকৃত পক্ষে শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোন বিষয় নেই। লোকজন না বুঝেই এসব কিনছেন এবং বিক্রি করছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ জানিয়েছেন, উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বিশাল পরিমাণ কাঠের গুড়ি ভেসে আসছে। এই কাঠ ধরতে গিয়ে স্থানীয়রা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে কাঠের সঙ্গে সাপের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তাই তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই ওয়েবসাইটের সকল কোনো লেখা, ছবি, অডিও বা ভিডিও “পেজ দ্যা নিউজ” কতৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কপি করা দন্ডনীয়। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করলে কতৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে।