সাইফুর রহমান রানা
সাবেক সংসদ সদস্য- কুড়িগ্রাম ১
জীবনযুদ্ধে সময়ের করাঘাতে টিকে থাকাই সব চেয়ে বড়ো পরীক্ষা। টিকে থাকতে পারলে তবেই সূর্যের নতুন রশ্মির দেখা পাওয়া যায়। টিকে থাকার এই লড়ায়ে নির্ভয়ে লড়ে এমন ই এক উজ্জ্বল সূর্য রশ্মির সাথে আজ আমরা কথা বলবো।
আমাদের সাথে আছেন সাইফুর রাহমান রানা, কুড়িগ্রাম এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আপনাদের প্রিয় মুখ,সাইফুর রহমান রানা।
জীবনযুদ্ধে সময়ের করাঘাতে টিকে থাকাই সব চেয়ে বড়ো পরীক্ষা। টিকে থাকতে পারলে তবেই সূর্যের নতুন রশ্মির দেখা পাওয়া যায়। টিকে থাকার এই লড়ায়ে নির্ভয়ে লড়ে এমন ই এক উজ্জ্বল সূর্য রশ্মির সাথে আজ আমরা কথা বলবো।
আমাদের সাথে আছেন সাইফুর রাহমান রানা, কুড়িগ্রাম এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আপনাদের প্রিয় মুখ।
৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে পেশাগত এবং ব্যক্তিগত নানান রোষানলের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও স্বৈরাচারী শক্তির সামনে মাথা না নোয়ানো এক নির্ভীক সৈনিক। শুধু রাজনীতি নয়, ক্রীড়া অঙ্গন, বিতর্ক এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাজ সেবা, কোনোকিছুতেই তিনি পিছিয়ে নেই। আজ আমরা এই গুণী মানুষটির লড়ে যাওয়ার গল্প এবং ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানবো।
প্রশ্ন ১: আমরা প্রথমেই জানতে চাই স্বাধীন বাংলায় বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পেরে আপনার কেমন লাগছে?
উত্তর: আলহামহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো লাগছে অপশক্তির পতনে শুধু আমি নই, বাংলাদেশের সকলেই এক নতুন জীবন পেয়েছে বলে মনে করি। প্রায় দুই দশক পার করে জাতি আবার আনন্দ উৎসবে মেতেছে। ভালো লাগছে।
প্রশ্ন ২: বিগত স্বৈরাচারের সময়টিতে কেমন অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছেন? আমাদের সাথে যদি একটু শেয়ার করতেন।
উত্তর: ১৬ বছর আসলে অনেকটা সময়। হিসাব করে দিন গণনা করা গেলেও অন্যায় অবিচার আসলে গণনা করা সম্ভব না। আমার মনে আছে আমার এলাকার ই একটা ছেলে, নাম রাসেল, বয়স ২৪-২৫ হবে, আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছিল। অভ্যন্তরীণ হুমকি ধামকি,তারপর ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নানান ভাবে অপদস্ত করেছে। গণ অভ্যূত্থানেও কয়েকবার আমার বাড়ি আক্রমণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমার পরিবারের সদস্য দেড় কেউ ভয় ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেছে। ৪ অগাস্ট আমাদের পার্টি অফিস ঘেরাও করে আমাদের কে আটকে রেখেছে। এভাবে আসলে বলে শেষ করা যাবে না।
প্রশ্ন ৩: এই অপশক্তির পতনের পর কখনো মনে হয়নি, প্রতিশোধ নেয়ার কথা?
উত্তর: না, এটা কখনোই মনে হয়নি। কুকুর কে আসলে শিক্ষা দেয়া যায় না। তাছাড়া আমি সাধারণ জীবন পার করতেই পছন্দ করি। তারা যা করেছে এটা তাদের অশিক্ষা থেকে করেছে। আমি সাধারণ মানুষ,সাধারণ মানুষের জন্য বাঁচতে চাই।
প্রশ্ন ৪: বিগত ১৬ বছরে কখনো মনে হয়নি মানুষের জন্য না বেঁচে নিজের জন্য বাঁচলে জীবনটা সহজ হতো?
উত্তর: আমি রাজনীতি তে এসেছিই সাধারণ মানুষের পাশে থাকার জন্য। ছাত্র জীবন থেকেই আমি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ১৯৯২ সাল থেকে টানা দশ বছর কুড়িগ্রাম ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। স্বৈরাচারী শক্তি যখন বার বার বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে তখন এই জনসাধারণই বার বার ঢাল হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন ৫: আমরা জানতে পেরেছি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে আপনি অনাগ্রহ প্রকাশ করলে এলাকার নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরা তাদের একদিনের উপার্জন আপনাকে দিতে এসেছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য?
উত্তর: জ্বি, এমনিই হয়েছিল। আসলে বিগত নির্বাচন ও যে সুষ্ঠূ হবে না সেটা জানতাম। আওয়ামীলীগ এর এই পুতুল খেলায় যোগ দিতে চাইনি। তাই আমি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেই। তবে জনগণের আবদারের কাছে হেরে গিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শোভন পুরো ভুরুঙ্গামারী উপজেলা দখল করে। সারা রাতের ছিল ছাপ্পর মারার পরও প্রায় ৩০০০ ভোটের ব্যবধান হয়েছিল মাত্র।
প্রশ্ন ৬: শত ত্যাগ তিতিক্ষ্যার পর অবশেষে দেশের মানুষের জন্য স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন। রাজনৈতিক ভাবে যদি জনগণের সেবা করার সুযোগ পান, তাহলে আপনার প্রথম পদক্ষেপ কি হবে?
উত্তর : আমি প্রথমে চাই, সাধারণ মানুষ যেন তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায়। আর সে জন্য আমার প্রথম কনসার্ন হবে মানুষের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করা। আমার এলাকায় মিল,গার্মেন্টস কম। তাই আমরা এই দিক দিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। এতে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি ভাবে দেশের অর্থনীতিতেও বড়ো ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
প্রশ্ন ৭: বিগত সরকারের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত যখন ভিসা বন্ধ করার কথা বলেছিলো তখন দেশের মানুষ অনেকটা আতংকিত হয়ে গিয়েছিলো কারণ ভালো চিকিৎসা বলতে জাতি শুধু ভারতকেই বুঝতো। এই বিষয় টার প্রতিকার আপনি কিভাবে করতে চান?
উত্তর: এই আতঙ্ক জাতির অনেকটাই কেটে গিয়েছে বলে মনে করি। আমরা কোনো ভাবেই এখন আর তাদের উপর নির্ভরশীল না। আমাদের কাছে আরো কিছু বিকল্প আছে যেখানে আরো স্বল্প মূল্যে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। তবুও আমি মনে করি দেশ কে আগে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এজন্য আমি নিজে চেষ্টা করবো, চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরো উন্নত প্রযুক্তি সামগ্রী আনার জন্য কাজ করতে। এটা আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
প্রশ্ন ৮: শিক্ষা জীবনে আপনি নিজেও ক্রীড়ার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সহ ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন আপনি। নতুন প্রজন্ম কে নিয়ে এই বিষয়ক কিছু ভাবছেন কি?
উত্তর: অবশ্যই। ক্রীড়ার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে পর্যাপ্ত মাঠ নেই, যেখানে বাচ্চারা খেলতে পারে। যার ফলে একটা বড় অংশ মাদকের দিকে ঝুকে পড়েছে। তাদের কে জ্ঞান বিকশিত করার সঠিক সুযোগ দিলে তারা গর্বের সাথে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতো। তাই তাদের কে খেলা ধুলা,সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য উদবুদ্ধ করতে হবে। এলাকায় এলাকায় কালচারাল ক্লাব গঠন করে প্রতি বছর একটা করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। তাতে তারা ব্যস্ত থাকবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিজেদের কে সচেতন রাখতে পারবে।
প্রশ্ন ৯: মিডিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আজকের না। কিন্তু মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আসলে কেউ ভাবে না। আমরা স্বাধীন ছিলাম না জন্য স্বচ্ছ ছিলাম না। আপনার কি মনে হয়, এখন কি মিডিয়া সেই স্বাধীনতা পেয়েছে? এখন মিডিয়া স্বচ্ছ?
উত্তর: অবশ্যই। এখন তারা স্বাধীন, তাদের বিভিন্ন সংবাদের মাদ্ধমে আমরা সেটা দেখতেও পারছি। তাছাড়া তারা লেখুক। লেখুক তারা, লিখলেই তো বুঝবে স্বাধীনতা আছে কি না।
জ্বি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার সময় এবং বক্তব্য আমাদের কাছে মূল্যবান। আশা করি আবার কোনো আড্ডায় বাকি কথা বলবো। শুভ কামনা এবং ধন্যবাদ আপনাকে।